বসন্তের সেরা সব আবৃত্তির কবিতা

2809
0
বসন্তের সেরা সব আবৃত্তির কবিতা
বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে নতুন প্রাণের স্পন্দন। প্রকৃতি সেজে ওঠে নবীনতার রূপে। গাছে গাছে ফোটে রঙিন ফুল, কোকিলের কুহুতানে মুখরিত হয় আকাশ। বসন্তের এই মোহময়ী পরিবেশে কবি মনও হয়ে ওঠে আবেগপ্রবণ। বসন্ত নিয়ে কবিতা লিখেছেন অনেকেই। বসন্ত নিয়ে লেখা কয়েকটি বিখ্যাত কবিতায় দেখে নেওয়া যাক।
বিষয় সমূহ

সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা,
ফুল ফুটুক না ফুটুক

ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।

শান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।

ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।

আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে
তারপর খুলে –
মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে
তারপর তুলে –
যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে
যেন না ফেরে।

গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে
একটা দুটো পয়সা পেলে
যে হরবোলা ছেলেটা
কোকিল ডাকতে ডাকতে যেত
তাকে ডেকে নিয়ে গেছে দিনগুলো।

লাল কালিতে ছাপা হলদে চিঠির মত
আকাশটাকে মাথায় নিয়ে
এ-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে
রেলিঙে বুক চেপে ধ’রে
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল–

ঠিক সেই সময়
চোখের মাথা খেয়ে গায়ে উড়ে এসে বসল
আ মরণ! পোড়ারমুখ লক্ষ্মীছাড়া প্রজাপতি!

তারপর দাড়ম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে
দড়িপাকানো সেই গাছ
তখন ও হাসছে।

কাজী নজরুল ইসলাম এর লেখা,
এলো বনান্তে পাগল বসন্ত

এলো বনান্তে পাগল বসন্ত।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে,চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।
বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর পরজ বসন্তের সুর,
পান্ডু-কপোলে জাগে রং নব অনুরাগে
রাঙা হল ধূসর দিগন্ত।
কিশলয়ে-পর্ণে অশান্ত ওড়ে তা’র অঞ্চল প্রাস্ত।
পলাশ-কলিতে তা’র ফুল-ধনু লঘু-ভার,
ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত।
এলো মেলো দখিনা মলয় রে প্রলাপ বকিছে বনময় রে।
অকারণ মন মাঝে বিরহের বেণু বাজে।
জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা,
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুন্ঠিত কুন্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো,
এই সংগীতমুখরিত গগনে
তব গন্ধ করঙ্গিয়া তুলিয়ো।
এই বাহিরভূবনে দিশা হারায়ে
দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।

অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে
আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে –
দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া
আজি ব্যকুল বসুন্ধরা সাজে রে।
মোর পরানে দখিন বায়ু লাগিছে,
কারে দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে,
এই সৌরভবিহবল রজনী
কার চরণে ধরণীতলে জাগিছে।
ওগো সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,
তব গম্ভীর আহবান কারে।

নির্মলেন্দু গুণ এর লেখা,
বসন্ত বন্দনা

হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,–দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক।

এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায়। হায় কী আনন্দ জাগানিয়া।

এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতোই ফেরাই চোখ,
যতোই এড়াতে চাই তাকে দেখি সে অনতিক্রম্য।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্য খানি
নবীন পল্ববে, ফুলে ফুলে । বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে।

আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরুপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার।

জীবনানন্দ দাশ এর লেখা,
পাখিরা

ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে –
বসন্তের রাতে
বিছানায় শুয়ে আছি;
– এখন সে কত রাত!
ওই দিকে শোনা যায় সমুদ্রের স্বর,
স্কাইলাইট মাথার উপর,
আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর।
তারপর চ’লে যায় কোথায় আকাশে?
তাদের ডানার ঘ্রাণ চারিদিকে ভাসে।

শরীরে এসেছে স্বাদ বসন্তের রাতে,
চোখ আর চায় না ঘুমাতে;
জানালার থেকে ওই নক্ষত্রের আলো নেমে আসে,
সাগরের জলের বাতাসে
আমার হৃদয় সুস্থ হয়;
সবাই ঘুমায়ে আছে সব দিকে –
সমুদ্রের এই ধারে কাহাদের নোঙরের হয়েছে সময়?
সাগরের ওই পারে – আরো দূর পারে
কোনো এক মেরুর পাহাড়ে
এইসব পাখি ছিল;
ব্লিজারডের তাড়া খেয়ে দলে দলে সমুদ্রের’পর
নেমেছিল তারা তারপর,
মানুষ যেমন তার মৃত্যুর অজ্ঞানে নেমে পড়ে !
বাদামি – সোনালি – শাদা – ফুটফুট ডানার ভিতরে
রবারের বলের মতন ছোটো বুকে
তাদের জীবন ছিল –
যেমন রয়েছে মৃত্যু লক্ষ লক্ষ মাইল ধ’রে সমুদ্রের মুখে
তেমন অতল সত্য হয়ে।

কোথাও জীবন আছে – জীবনের স্বাদ রহিয়াছে,
কোথাও নদীর জল রয়ে গেছে- সাগরের তিতা ফেনা নয়,
খেলার বলের মতো তাদের হৃদয়
এই জানিয়াছে;
কোথাও রয়েছে প’ড়ে শীত পিছে, আশ্বাসের কাছে
তারা আসিয়াছে।

তারপর চ’লে যায় কোন এক ক্ষেতে
তাহার প্রিয়ের সাথে আকাশের পথে যেতে যেতে
সে কি কথা কয়?
তাদের প্রথম ডিম জন্মিবার এসেছে সময়।

অনেক লবণ ঘেঁটে সমুদ্রের পাওয়া গেছে এ মাটির ঘ্রাণ,
ভালোবাসা আর ভালোবাসার সন্তান,
আর সেই নীড়,
এই স্বাদ– গভীর– গভীর।
আজ এই বসন্তের রাতে
ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে;
ওই দিকে শোনা যায় সমুদ্রের স্বর
স্কাইলাইট মাথার উপর,
আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর।

মহাদেব সাহা এর লেখা,
বসন্তের একটি বাংলা উদ্ধৃতি

চুনা-ওঠা দেয়ালের মতো প্রকৃতির এই খসখসে গালে
আর কী রং মাখাবে চৈত্র,
তোমার পকেটে ভাঁজ-করা শতবর্ষের শীতকাল,
মাতাল হাওয়ায় যতই এই বার্ধক্য ঢেকে দিতে চাও
তার মুখমণ্ডলে জমে আছে
উত্তর গোলার্ধের অনন্ত বরফ
তার শরীর ২৫ ডিগ্রি মাইনাস শীত রাত্রে;

কেনা জ্যেত্স্না, গোলাপ আর সৌরভের জন্য
হাহাকার করে
আমি কতোকাল শিশুর মতো হামাগুড়ি দিয়ে
এই শীতকাল পেরুব? গুনগুন করা চৈত্রসন্ধ্যা
মধুর দুপুর
এখনো আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে,
আমি সাড়া দেই না;
কেন দেব? আমার শীত কখন অস্ত যাবে,
কেউ জানে না।

হয়ত তবু সদ্যফোটা স্তনের গন্ধে, ঠোঁটের লাবণ্যে
জেগে উঠবে ঝিমিয়ে-পড়া দিনরাত্রি,
একুশ শতকের এই দীর্ঘ শীত পাড়ি দেওয়ার জন্য
আর কতো হিমযুগ পার হতে হবে আমাকে,
বসন্ত, তোমার হাতবাক্সে কি সেই উত্তর লেখা আছে?
চলো বসন্তের একটি বাংলা উদ্ধৃতি শোনাতে শোনাতে
আমরা পৃথিবীর সব নদী পার হই।

তসলিমা নাসরিন এর লেখা,
ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত

ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত,
তবু এখনো কেমন যেন হৃদয় টাটায়-
প্রতারক পুরুষেরা এখনো আঙুল ছুঁলে
পাথর শরীর বয়ে ঝরনার জল ঝরে।
এখনো কেমন যেন কল কল শব্দ শুনি
নির্জন বৈশাখে, মাঘ-চৈত্রে-
ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু
বিশ্বাসের রোদে পুড়ে নিজেকে অঙ্গার করি।
প্রতারক পুরুষেরা একবার ডাকলেই
ভুলে যাই পেছনের সজল ভৈরবী
ভুলে যাই মেঘলা আকাশ, না-ফুরানো দীর্ঘ রাত।
একবার ডাকলেই
সব ভুলে পা বাড়াই নতুন ভুলের দিকে
একবার ভালোবাসলেই
সব ভুলে কেঁদে উঠি অমল বালিকা।
ভুল প্রেমে তিরিশ বছর গেল
সহস্র বছর যাবে আরো,
তবু বোধ হবে না নির্বোধ বালিকার।

মাহাবুব আলম এর লেখা,
বসন্তের দান

তুমি ফাগুন হাওয়ার মিষ্টি ধ্বনি!
কলতানের অলংকারে গগন হতে
আনলে সখি দৃপ্ত হাতে,
ফাগুনেরই বাণী।
তুমি ফাগুন হাওয়ার মিষ্টি ধ্বনি!
আমায় জাগালে মরু হতে
নরম ছোয়ায়, হৃদ ঈশারায়,
মোহন বাঁশীর অগোচরে
জাগিয়ে তোমার হৃদ পুঞ্জে,
মধুর কানাকানি।
তুমি ফাগুন হাওয়ার মিষ্টি ধ্বনি!
তুমি কৃষ্ণচূড়ার পাঁপড়ি কুঞ্জে;
কোকিল তোমার পুঞ্জ সাথি,
ফুল কুমারীর সাঁজে সাঁজে
সাজাও প্রেমের মাল্যখানি।
তুমি ফাগুন হাওয়ার মিষ্টি ধ্বনি!
আমায় সাজাও, রাঙ্গাও আমায়
দাও ভরে দাও শৃন্য হিয়ায়
ধরিএীকে আবার সাজাই
দিয়ে প্রেমের বানী–
তুমি ফাগুন হাওয়ার মিষ্টি ধ্বনি!

সুব্রত পাল এর লেখা,
থেকো, বসন্তসন্ধ্যায়

১.
যদি বসন্ত পলাশ খোঁজে, খুঁজুক। তুমি খুঁজো না
রাঙামাটির পথে হাঁটতে ইচ্ছে করলে, হেঁটো না
শুধু আমাকে খুঁজো

আমি তো দুরন্ত ফাল্গুন গোটা গায়ে মেখে
তোমার জন্য বসে আছি
মনে মনে মাদল বাজাচ্ছি আর
গোধূলির রঙ দেখছি দিগন্তে

যদি বসন্ত তোমাকে ডাকে, ডাকুক। তুমি যেয়ো না
আঙুল ছুঁতে ইচ্ছে করলে, ছুঁয়ো না। কথা বোলো না
শুধু আমাকে ছুঁয়ো

আমি তো পাতায় পাতায় লুকিয়ে রেখেছি
সব ঢেউ, দ্বীপ, দ্বীপপুঞ্জ

গহন অরণ্য হয়েছি
কুয়াশায় সেজেছি কখনো

তবু যদি বসন্ত আসে তোমার কৃষ্ণচূড়া ডালে
আর কোকিল ডাকে, তবে অপেক্ষা কোরো।
আমি আবির নিয়ে আসছি, থেকো…

২.
নিজেকে দেখাতে গিয়ে শুধু তোমাকেই দেখছি

এই বসন্তসন্ধ্যায়
সমস্ত আড়াল, অভিমান, সমস্ত সীমারেখা
উপেক্ষা করে আজ তোমারই সামনে এসেছি

এই আনমনা মন, মনের ভেতর তরঙ্গ
এই ভ্রূভঙ্গি, এই ঠোঁটের উচ্চারণ
সব যদি আলাদা মনে হয়
এসো, তাহলে স্পর্শে বুঝি দুরন্ত অস্থিরতা

এসো, ক্রমাগত আঁকড়ে ধরি
আর ক্রমাগতই বাঁচার চেষ্টা করি

হে আমার কাঙ্খিত প্রেম
আগে তো বলো নি কখনো
ভালোবাসায় এত কষ্ট থাকে
এত আলোড়ন, এত নিঃসঙ্গতা

কখনো কিছু তো বুঝে নিও
কিছু অনুচ্চারিত শব্দ, কিছু সমুদ্র ফেনায়
ছিটেফোঁটা যন্ত্রণা, বুঝে নিও

আজ পূর্ণিমা নাকি অমাবস্যা
আকাশে চাঁদ আছে কি নেই, কিচ্ছু জানি না আমি
শুধু বসন্ত জানি আর জানি তোমাকে
তাই তো তোমারই সামনে এসেছি
তোমাকেই দেখছি
দেখছি ভরসার মত করে, কান্নার মত করে
স্পর্ধার মত করে, ইচ্ছের মত করে
শুধু তোমাকেই দেখছি
অথচ আমি নিজেকেই দেখাতে এসেছিলাম
এই বসন্তসন্ধ্যায়।

বীথি চট্টোপাধ্যায় এর লেখা,
একা

আমার চোখে বসন্ত দারুণ চৈত্রমাস
চতুর্দিকে শিমূল-পলাশ কৃষ্ণচূড়ার ত্রাস।
ঝড় উঠেছে নিখুঁত কালো বৃষ্টি ভেজা রাত
আঁচল দিয়ে দুঃখ ঢাকি কোথায় তোমার হাত ?

তব্ধ যদি ভালোবাসা প্রেমের-কম্পন
ফিরিয়ে দাও কিশোরীকাল প্রথম চুম্বন।
ভালোবাসার আগুন ঝড়ে চাইনি কোনো দাম
অশ্রুবিহীন চক্ষু হল প্রেমের পরিণাম।
এই সময়েই ভিন্ন হলে এমন চৈত্রমাস
ভালোবাসার ফুটছে কলি, ফাল্গুন বাতাস!

এই যে চোখ এই যে প্রেম, এই যে হা-হুতাশ
এই বসন্তে দেবো কাকে প্রেমের আস্বাস ?
আমার চোখে বসন্ত দারুণ চৈত্রমাস
ভালোবাসা বাসার পরে, ভাঙলে বিশ্বাস!

শ্রীজাত এর লেখা,
বিশু পাগলের কবিতা

বিপদ আবার ডাক দিয়েছে, দমকা বাতাস… আলগা বোতাম…
বসন্তকে সাক্ষী রেখে আজ যদি ফের সঙ্গী হতাম?

একখানা দিন ওলোট পালট, একখানা বেশ ঝাপটা বিকেল
পাগল হওয়া বিশুই কেবল সামলে রাখে নন্দিনীকে।

যা ইচ্ছে তাই বলুক লোকে, নিন্দুকে আর কী না রটায়
অনামী সেই বাস স্টপেজে দেখা হবেই পৌনে ছ’টায়।

একটু হাঁটা, একটু চলা, একটু বসা পাড়ার রোয়াক…
মিথ্যে একটা আঙুল তোমার কপালে আজ সত্যি ছোঁয়াক।

এই দেখা তো মুহূর্ত নয়, অন্যরকম অনন্তকাল
মাথার মধ্যে গুমরে মরে পাগলা হাওয়ার একলা পোকা।

ফিরবে তুমি ভিড় বাসে আর আমার ফেরা চুপবালিশে
চোখের পাতা কমল কি না, কে আর অত রাখছে হিসেব…

কেবল তোমার ফুলের মালা, রাজার দিকে সপাট জেহাদ –
যুগ পেরিয়ে আরেকটিবার আমার হাতে দিও সে হাত…

হাতের রেখায় থাকবে জানি মাইলফলক, সরাইখানা…
কৃষ্ণচূড়ার ছোট্ট চিঠি, রাধাচূড়ার বলতে মানা

বিপদ আসুক, লাগুক বাতাস, ছুটুক সময় তোমার দিকে
পাগল হওয়া বিশুই জেনো আগলে রাখে নন্দিনীকে!

নির্মলেন্দু গুণ এর লেখা,
আমার বসন্ত

এ না হলে বসন্ত কিসের? দোলা চাই অভ্যন্তরে,
মনের ভিতর জুড়ে আরো এক মনের মর্মর,
পাতা ঝরা, স্বচক্ষে স্বকর্ণে দেখা চাঁদ, জ্যোৎস্নাময়
রাতের উল্লাসে কালো বিষ । এ না হলে বসন্ত কিসের ?

গাছের জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়েছে অপিচ্ছিল বোধ,
ওর মুখে কুমারীর খুন, প্রসূতির প্রসন্ন প্রসূন ।
কন্ঠ ভরে করি পান পরিপূর্ণ সে-পাত্র বিষের,
চাই পূর্ণ শিশিরে নির্ঘুম । এ না হলে বসন্ত কিসের?

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী এর লেখা, বসন্তের আগমনী

কুয়াশাভরা মেঘ গেছে কেটে
শীতের প্রকোপ নাই,
তরু শাখে হেরি নব কিশলয়
বিহগেরা গাহে তাই।

আম্রকাননে শুনি ক্ষণে ক্ষণে
কোকিলের কুহুতান,
আজি বসন্তে বসন্তের দূত
গাহে আগমনী গান।

আম্রের শাখে নব মঞ্জুরী
মুকুল ধরেছে কত,
কমল কাননে ধায় অলিগণে
গুঞ্জরিয়া অবিরত।

বসন্ত প্রভাতে অজয়ের ঘাটে
সুশীতল নদীজলে,
ভাটিয়ালি গেয়ে দাঁড় টানে মাঝি
ঘাট ভরে কোলাহলে।

যেদিকে তাই নব কিশলয়
পুলক জাগিছে মনে,
বসন্ত এসেছে কুসুম ফুটেছে
পলাশের বনে বনে।

হেমন্ত সৎপতি এর লেখা, বসন্তের আগমনী

নয়নে বসন্ত হৃদয়ে বসন্ত
বসন্ত এসেছে মনে,
রঙের ধারায় ভরেছে ভুবন
বাতাস বইছে গানে।
অশোক পলাশ শিমুল রাঙে যে
কুসুম ফুটেছে বনে,
বধুয়া আমার শরম পেয়েছে
লুকায়ে ঘরের কোণে।
শিহর জেগেছে মনের ভিতরে
ফাগুয়া আগুন সনে,
প্রেমের স্ফুরণ ঘটছে গভীরে
কোনো না বারণ মানে।
গুঞ্জে অলিরা পুঞ্জে পুঞ্জে
ছুটছে মধু সে পানে,
ফুলের পসরা কুঞ্জে কুঞ্জে
কোকিল ভরায় তানে।
বধুয়া আমার নাইরে সে লাজে
আর যে ঘরের কোণে,
রঙের ভুবনে সুরের ভুবনে
হাসছে খেলছে সনে।
মধুর বসন্ত প্রেমের বসন্ত
বসন্ত ধরেছে মনে,
বইছে বসন্ত ভাসছে বসন্ত
কবিতা ও গল্প গানে।

প্রদীপ বালা এর লেখা, আমার শহরঃ বসন্তের প্রেম

বসন্ত তবে এসেই গেল, বুঝলে ভায়া!
একটা কুকুর শুকছে আমার পায়ের ধুলো
চমকে উঠে পেছনে দেখি, কি বেহায়া!
আমার হাতে আধখানা রোল, ঝুলছে নুলো
ছ’টা পঁচিশ, পেটে তখন ছুঁচোর সেকি লাফ
বসন্ত যদি এসেই থাকে তোর বাপের কি
ছুটছে সবাই বাস ধরবে ট্রেন ধরবে
উল্টোডাঙ্গার মোড়ে শুধু আমি একাকী…
কী আর হবে বসন্ত এলে, ভিক্টোরিয়া
ময়দান আর পার্কে শুধু ভীড় বাড়বে
শীতে দেখিয়ে খেত সবাই, এখন মুখ লুকোবে
ছাতার তলায়। আমারও সময়, বাস ছাড়বে।
ছিল না কি বসন্ত আমারও, একটা দুটো…
ছাতার তলায় ঘন হয়ে বসে পৃথিবীতে মুখ
উত্তাপে আর উত্তাপে তোর বুকে
ঘাম আর ঘ্রাণের ভেতর খুঁজিনি প্রেমের সুখ ?
তবুও তো প্রেম এলো না, তার বদলে
একতাল মাংস এল উঠে, চিকেন কষা
কপাৎ করে গিলে ফেলে দেখি তোকে
কোমরে বেশ মেদ জমেছে,বাসের সীটে বসা।
ধুস শালা! বাস ছুটে যায় ধুলোর বেগে
হাজার হাজার ধুলো তখন প্রেমের খেলা
খেলতে থাকে, হাতে হাত রেখে সবাই
পার হয়ে যায় রাস্তা ঘাট এই বেলা
আমিই শুধু দাঁড়িয়ে থাকি, ভীড়ের ভেতর
ছুটোছুটি যন্ত্র মানব,বসন্ত এসে গেছে
সময় এসে লাথ মারে পেছনে, “ভাগ শালা
সময় নেই প্রেম মারাতে গেছে!”
হটাত করেই বাসটা এসে গেল
আমারও তখন ঘরে ফেরার তাড়া
বাসের ধোঁয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গেল
তোমার আমার চোখের ইশারা
সে ইশারার একটুখানি রেশ বুকের ভেতর
সযত্নে রাখি, হটাত হটাত ঠোকর মেরে ফেরে
বাসে উঠে বসন্তকে পেছনে ফেলে দেখি
আধখানা প্রেম ঝুলে আছে উল্টো ডাঙ্গার মোড়ে!

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী এর লেখা, নব বসন্তের গান

বসন্তের রং লাগে
ফুলশাখে ফুলবাগে
বসন্ত এলো রে এ ধরায়,
বসন্তের আগমনে
রং লাগে দেহ মনে
তরুশাখে পাখি গীত গায়।
নব নব কিশলয়,
পত্রে পল্লবিত হয়
সুশীতল অজয়ের নীর,
রাঙাপথে দুইধারে
তালগাছ সারে সারে
মন্দগতি বহিছে সমীর।
অজয় নদীর ঘাটে
সূর্য আসি বসে পাটে
সোনালী কিরণ ঝরে জলে,
বসন্ত এলো আজি,
নব নব রূপে সাজি
বসন্ত আসিল ধরাতলে।

আখিরুল ইল্লিন
WRITTEN BY

আখিরুল ইল্লিন

জন্ম টাঙ্গাইলের সখিপুরে। বেড়ে উঠাও সেখানেই। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো। বর্তমানে ইন্টার ১ম বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি দুর্দান্ত এ বালক বিভিন্ন ধরনের ভলান্টিয়ারিং কার্যক্রমের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কবিতা লেখা তার শখ, পাশাপাশি গল্পও লেখে সে। গল্প, কবিতা কিংবা সাহিত্যের প্রতি গভীর এক ভালোবাসা থেকেই সে প্রতিষ্ঠা করে 'সাহিত্য রস' নামে এক সাহিত্য সংগঠন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।