দায়িত্ব বড়ই আজব এক অধ্যায়।
এটি কেড়ে নেয় আমাদের শৈশব, গিলে ফেলে কৈশোরের আনন্দ,
আর শেষে গ্রাস করে জীবনের হাসি-খুশি মূহূর্তগুলো।
কখনো এই দায়িত্ব আসে হঠাৎ করেই,
আবার কেউ কেউ বহু আগেই পায় তার পূর্বাভাস।
আমি পেয়েছিলাম সেই পূর্বাভাস —
যখন বাবা-মা বললেন, “তুইই আমাদের শেষ ভরসা।”
আর যখন বুঝলাম, বাবার সারাজীবনের সঞ্চয় এখন আমিই,
তখন দায়িত্বকে শুধু একটা শব্দ নয়,
একটা বাস্তব চাপে রূপান্তরিত হতে দেখলাম।
তুমি চাও বা না চাও,
দায়িত্ব ঠিকই তোমার কাঁধে এসে বসে।
অনেকে বলে, যেহেতু আগে থেকে জানতাম,
আমার কাছে হয়তো সব সহজ।
কিন্তু একবার ভাবো,
যখন আমার সমবয়সীরা তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ আনন্দে মেতে উঠছে,
আমি তখন প্রস্তুতি নিচ্ছি দায়িত্ব পালনের।
যদি হঠাৎ করেই এই দায়িত্ব এসে পড়ত,
তাহলে অন্তত তার আগ পর্যন্ত আমি বাঁচতে পারতাম মুক্তভাবে।
কিন্তু আমি জানতাম — আমার জন্য অপেক্ষা করছে
একটা নিয়ন্ত্রিত, শৃঙ্খলাবদ্ধ, “শুধু হ্যাঁ বলার” জীবন।
আমার এখনো দায়িত্ব আছে —
প্রধান দায়িত্ব হলো বাবা-মার বাধ্য সন্তান হওয়া,
তাদের হ্যাঁ-তে হ্যাঁ, না-তে না বলা,
নিজের স্বপ্ন ভুলে তাদের ইচ্ছাকে আপন করে নেওয়া।
সোজা মনে হচ্ছে?
একটুও না।
তুমি যখন দেখবে তোমার বন্ধু ঘুরছে,
কারও পছন্দের গাড়ি কিনে দিচ্ছে বাবা,
কেউ আড্ডা দিচ্ছে রাতভর,
তখন বুঝতে পারবে এই দায়িত্ব কেমন ভারী।
আর তুমি?
তোমাকে তখন শুনতে হবে —
“এখন সময় না, পরে এসব করবা।”
তুমি হয়তো মেনে নেবে।
কিন্তু পরে আর সেই সময়টা আসবে না।
এভাবে একটা সময় আসবে,
যখন তুমি নিজেই নিজেকে এই আনন্দ থেকে সরিয়ে ফেলবে।
তুমি তখন এমন এক অভ্যাসে ডুবে যাবে,
যেখানে আনন্দের চেয়ে দায়িত্বই তোমার বড় পরিচয়।
তাহলে কি দায়িত্ব মানেই দুঃখ?
না।
দায়িত্ব পালন করতে পারা এক ধরণের আনন্দ,
যা অনেকেই বোঝে না।
তুমি যখন পরিবারের জন্য কিছু করো,
তোমার উপস্থিতিতে যদি কারো চোখে শান্তি আসে —
সেটা অনেক বড় অর্জন।
তবে...
নিজেকে ভুলে গিয়ে, নিজেকে মেরে,
এই অর্জন যদি হয় — তাহলে সেটা পূর্ণতা নয়,
সেটা আত্মত্যাগ।
তাই বলি —
অন্তত নিজের কৈশোরটা উপভোগ করে নিও।
এই সময় আর কোনোদিন ফিরে আসবে না।
পরে দায়িত্ব নাও — নিশ্চয়ই নাও —
কিন্তু এখন অন্তত তোমার মতো করে বাঁচো।
“বিশ্বজয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আগে,
একবার অন্তত নিজেকে জয় করো।”
– এই লেখাটা তোমার জন্য, যিনি দায়িত্বের ভারে হাঁপিয়ে উঠেছেন,
কিন্তু এখনো ভেতরে কোথাও বাঁচতে চান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ