সাহিত্যপ্রীতি পাঠকরা প্রায়ই উদ্ধৃতিপংক্তি বা সাহিত্যকর্মের উৎস নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন। সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অত্যন্ত সুন্দর এবং অর্থবহ পংক্তি অনেকে ভুলবশত নিমাই ভট্টাচার্যের লেখা মনে করছেন। বিষয়টি শুধু পাঠকের বিভ্রান্তি নয়, বরং সাহিত্যিক স্বীকৃতির প্রশ্নও তুলে ধরে।
এই ব্লগে আমরা:
- উক্ত পংক্তি এবং এর মূল উৎস শনাক্ত করব।
- কেন পাঠক বিভ্রান্ত হচ্ছেন তা বিশ্লেষণ করব।
- সাহিত্যিক ন্যায্যতা ও সঠিক স্বীকৃতির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করব।
উক্ত পংক্তি এবং বিভ্রান্তি
উক্ত পংক্তি হলো:
প্রহর শেষের আলোয় রাঙা
সেদিন চৈত্রমাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম
আমার সর্বনাশ।
অনেকে মনে করছেন এটি নিমাই ভট্টাচার্যের মৌলিক লেখা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। উক্তিটি মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর রচনা, গীতবিতান‐নাট্যগীতি/১১৫ নম্বর গানের অংশ, যা নিমাই ভট্টাচার্য তাঁর প্রসিদ্ধ উপন্যাস মেমসাহেব-এ উদ্ধৃতির মাধ্যমে ব্যবহার করেছেন।


নিমাই ভট্টাচার্যের মেমসাহেব-এ ব্যবহৃত পংক্তিটির পৃষ্ঠা
নিমাই ভট্টাচার্য যখন এই লাইনটি ব্যবহার করেছেন, সেটি ছিল কেবল শ্রদ্ধার প্রদর্শন এবং গল্পের প্রেক্ষাপটে একটি আবেগপূর্ণ মুহূর্ত তুলে ধরার জন্য। কিন্তু উপন্যাসটির প্রসিদ্ধি এবং পংক্তির সুন্দরতা পাঠককে বিভ্রান্ত করেছে।

পাতা: রবীন্দ্র রচনাবলি (ত্রয়োদশ খন্ড) বিশ্বভারতী

বিভ্রান্তির কারণঃ
১. উদ্ধৃতির প্রাসঙ্গিকতা
মেমসাহেব-এ এই পংক্তিটি গল্পের আবেগকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু যদি উদ্ধৃতির উৎস স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা না হয়, পাঠক প্রায়ই ধরে নেন এটি উপন্যাসকারের নিজস্ব সৃষ্টি।
২. উপন্যাসের জনপ্রিয়তা
নিমাই ভট্টাচার্যের মেমসাহেব বাংলা সাহিত্যের একটি সুপরিচিত উপন্যাস। এর মাধ্যমে যেই কবিতার পংক্তি পাঠক নজরে আসে, তারা সহজেই মনে করেন এটি উপন্যাসকারের মৌলিক লেখা।
৩. সাহিত্যিক পরিচয়ের অস্পষ্টতা
উদ্ধৃতির উৎস স্পষ্ট না থাকলে পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে লেখককে মূল স্বত্বাধিকারী মনে করতে পারেন। তাই সাহিত্যিক ন্যায্যতা বজায় রাখা জরুরি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ