জীবনানন্দ দাশের সেরা ৫০ টি উক্তি

13911
0

১. শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে

বলিলাম: ‘একদিন এমন সময়

আবার আসিয়ো তুমি, আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!–

পঁচিশ বছর পরে!’


২. অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল;

অনেক কমলা রঙের রোদ;

আর তুমি ছিলে;

তোমার মুখের রূপ কত শত শতাব্দী আমি দেখি না,

খুঁজি না।


৩. স্থবিরতা, কবে তুমি আসিবে বলো তো।


৪. ‘আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন – কতদিন আমিও তোমাকে

খুঁজি নাকো; – এক নক্ষত্রের নিচে তবু – একই আলো পৃথিবীর পারে

আমরা দুজনে আছি; পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,

প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়।


৫. মনে হয় শুধু আমি,- আর শুধু তুমি

            আর ঐ আকাশের পউষ-নীরবতা

রাত্রির নির্জনযাত্রী তারকার কানে- কানে কত কাল

            কহিয়াছি আধো- আধো কথা!


৬. থমথমে রাত,- আমার পাশে বসল অতিথি,-

বললে,- আমি অতীত ক্ষুধা,-তোমার অতীত স্মৃতি!


৭. তবুও নদীর মানে স্নিগ্ধ শুশ্রূষার জল, সূর্য মানে আলো :

এখনো নারী মানে তুমি, কত রাধিকা ফুরালো।


৮. যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা


৯. তোমার মুখের দিকে তাকালে এখনো

আমি সেই পৃথিবীর সমুদ্রে নীল,

দুপুরের শূন্য সব বন্দরের ব্যথা,

বিকেলের উপকন্ঠে সাগরের চিল,

নক্ষত্র, রাত্রির জল, যুবাদের ক্রন্দন সব–

শ্যামলী, করেছি অনুভব।


১০. শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে-

বলিলাম- ‘একদিন এমন সময়

আবার আসিয়ো তুমি- আসিবার ইচ্ছা যদি হয়-

পঁচিশ বছর পরে।’


১১. আমি তারে পারি না এড়াতে,

সে আমার হাত রাখে হাতে;

সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়,

সব চিন্তা – প্রার্থনায় সকল সময়

শূন্য মনে হয়,

শূন্য মনে হয়!


১২. আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন-কতদিন আমিও তোমাকে

খুঁজি নাকো;- এক নক্ষত্রের নিচে তবু-একই আলোপৃথিবীর পারে

আমরা দুজনে আছি;


১৩. সব ছেড়ে দিয়ে আমি তোমারে একাকী ভালোবেসে  

তোমার ছায়ার মতো ফিরিয়াছি তোমার পিছনে!


১৪. নারী,

সেই এক তিল কম

আর্ত রাত্রি তুমি।


১৫. তুমিও দেখ নি ফিরে – তুমিও ডাক নি আর– আমিও খুঁজি নি অন্ধকারে


১৬. আজকে রাতে তোমায় আমার কাছে পেলে কথা

বলা যেত; চারিদিকে হিজল শিরীষ নক্ষত্র ঘাস হাওয়ার প্রান্তর।


১৭. তবুও তোমার কাছে আমার হৃদয়।


১৮. সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়,

আমাদের মুখ সারাটি রাত্রি মাটির বুকের’পরে!


১৯. তবুও নদীর মানে স্নিগ্ধ শুশ্রূষার জল, সূর্য মানে আলো :

এখনো নারী মানে তুমি, কত রাধিকা ফুরালো।


২০. তবু সেদিন

আমার এ পথে তুমি এসেছিলে,- বলেছিলে যত কথা,-

কারণ, তখন তুমি ছিলে বন্ধুহীন;


২১. হয়তো এসেছে চাঁদ একরাশ পাতার পেছনে।

কুড়ি বছর পর, তখন তোমারে নাই মনে!


২২. যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে

অথচ যার মুখ আমি কোনাদিন দেখিনি,

সেই নারীর মতো

ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়ে উঠেছে।


২৩. আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি;

জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে

কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে।


২৪. আমারে সে ভালোবাসিয়াছে,

আসিয়াছে কাছে,

উপেক্ষা সে করেছে আমারে,

ঘৃণা ক’রে চ’লে গেছে—যখন ডেকেছি বারে-বারে

ভালোবেসে তারে;


২৫. পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;

পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;

পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু’জনার মনে;

আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে।


২৬. অর্থ নয়, র্কীতি নয়, সচ্ছলতা নয়-

আরো এক বিপন্ন বিস্ময়

আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে

খেলা করে

আমাদের ক্লান্ত করে;

ক্লান্ত ক্লান্ত করে:


২৭. এই রাত!- বেড়ে যায়, তবু চোখাচোখি 

হয় নাই দেখা

আমাদের দুজনার!- দুইজন,- একা!


২৮. আমি চ’লে যাব,- তবু জীবন অগাধ

তোমারে রাখিবে ধ’রে সেই দিন পৃথিবীর’পরে;-

আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে!


২৯. তোমার মুখের দিকে তাকালে এখনো

আমি সেই পৃথিবীর সমুদ্রে নীল,

দুপুরের শূন্য সব বন্দরের ব্যথা,

বিকেলের উপকন্ঠে সাগরের চিল,

নক্ষত্র, রাত্রির জল, যুবাদের ক্রন্দন সব–

শ্যামলী, করেছি অনুভব।


৩০. তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন।


৩১. পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;

মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে।


৩২. যে নদী হারায়ে যায় অন্ধকারে –রাতে – নিরুদ্দেশে,

তাহার চঞ্চল জল স্তব্ধ হয়ে কাঁপায় হৃদয়!


৩৩. কুড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে!


৩৪. একদিন দিয়েছিলে যেই ভালোবাসা ,

ভুলে গেছ আজ তার ভাষা!

জানি আমি,- তাই 

আমিও ভুলিয়া যেতে চাই 

একদিন পেয়েছি যে ভালোবাসা 

তার স্মৃতি – আর তার ভাষা


৩৫. আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ

হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

নক্ষত্রের নিচে।


৩৬. তোমাকে দেখার মতো চোখ নেই–তবু,

গভীর বিস্ময়ে আমি টের পাই–তুমি

আজও এই পৃথিবীতে রয়ে গেছ।


৩৭. বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যথিত তোমার দুই চোখ

খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি- কুয়াশার পাখনায়।


৩৮. চোখে তার

যেন শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার!


৩৯. সকল কঠিন সমুদ্রে প্রবাল

লুটে তোমার চোখের বিষাদ ভৎসনা. প্রেম নিভিয়ে দিলাম, প্রিয়।


৪০. আশার ঠোঁটের মতো নিরাশার ভিজে চোখ চুমি

আমার বুকের’পরে মুখ রেখে ঘুমায়েছ তুমি!


৪১. জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি, বছরের পার-

তখন হঠাৎ যদি মেঠো পথে পাই আমি তোমারে আবার!


৪২. যদি আজ পৃথিবীর ধুলো মাটি কাঁকরে হারাই 

যদি আমি চলে যাই

নক্ষত্রের পারে,-

জানি আমি, তুমি আর আসিবে না খুঁজিতে আমারে!


৪৩. শরীর রয়েছে, তবু মরে গেছে আমাদের মন! 

হেমন্ত আসেনি মাঠে ,- হলুদ পাতায় ভরে হৃদয়ের বন!


৪৪. আমি তার উপেক্ষার ভাষা

আমি তার ঘৃণার আক্রোশ 

অবহেলা ক’রে গেছি ; যে নক্ষত্র – নক্ষত্রের দোষ 

আমার প্রেমের পথে বার-বার দিয়ে গেছে বাধা

আমি তা ভুলিয়া গেছি ;

তবু এই ভালোবাসা – ধুলো আর কাদা – ।


৪৫. “পৃথিবীর এই ক্লান্ত এ অশান্ত কিনারার দেশে

এখানে আশ্চর্য সব মানুষ রয়েছে।”


৪৬. “অপরাজিতার মতো নীল হয়ে- আরো নীল- আরো নীল হয়ে

আমি যে দেখিতে চাই;- সে আকাশ… “


৪৭. ওই দূর নক্ষত্রের কাছে আজ আর প্রশ্ন নাই, 

– মাঝরাতে ঘুম লেগে আছে চক্ষে তার! এলোমেলো রয়েছে আকাশ!


৪৮. চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’

পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।


৪৯. প্রেম ধীরে মুছে যায়, 

নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,

হয় নাকি?


৫০. তোমার বুকের পরে আমাদের পৃথিবীর অমোঘ সকাল;

তোমার বুকের পরে আমাদের বিকেলের রক্তিল বিন্যাস;

তোমার বুকের পরে আমাদের পৃথিবীর রাত;

নদীর সাপিনী, লতা, বিলীন বিশ্বাস।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।