“এইখানে ফাল্গুনের ছায়ামাখা ঘাসে শুয়ে আছি; এখন মরণ ভালো, শরীরে লাগিয়া রবে এই সব ঘাস;” জীবনানন্দের কবিতার এই অংশটুকু একটু তৃপ্তিভরে আবৃত্তি করে সে কিছুক্ষণ একদম নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে রইলো মাঠে, ঘাসের উপরে। সে হয়তো জমিনে শুয়ে আকাশ দেখছিলো আর কিছু কল্পনা করছিল কিন্তু তার এই নিরবতা আর তার স্বাভাবিক নিরবতার মাঝে আকাশ-জমিন তফাৎ। আমরা বিকালে প্রাইভেট শেষে স্কুল মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তবে ওর মনটা তখন কেমন ছিল তা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। কারণ কবি-সাহিত্যিক দের মন বুঝতে সকলেরই একটু অসুবিধেই হয়। তারা সবসময় বিভিন্ন কল্পনাতে এমনভাবে ডুবে থাকে যে, তাদের নিজেদেরকেও সেই কল্পনার একটা অংশ হিসেবেই দেখে, মানে প্রধান চরিত্রের। জীবনান্দ দাশের লেখা কবিতাগুলো তার পছন্দের কবিতার তালিকায়, বলতে গেলে সবার উপরেই স্থান পেয়েছে। এবং এই কবিতাগুলো প্রায়ই তাকে আবৃত্তি করতে শুনা যায়, আমাদেরও শুনতে ভালোই লাগে। তবে তার মুখ থেকে যে কবিতাই শুনি সেটাই ভালো লাগে, যার লেখাই হোক-না কেন। হয়তোবা সে শুধু ভালো কবিতাগুলোই আমাদের শুনায় কিংবা সব কবিতাই তার মুখের ভিতর থেকে মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার মতো প্রস্তুতি নিয়েই বের হয়। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে তার করা আবৃত্তি এবং আজকের আবৃত্তি দুটো যেন দুটি ভিন্ন দেশের আবেগ, ভিন্ন দুটি অভিব্যক্তি। আমার এই বিষয়ে একটু অন্যরকম বোধ হলো, একটু অন্যরকম। ঠিক কেমন বোধ হলো তা বলে বুঝাতে পারছিনা। তবে বুঝানোর জন্য উদাহরণ হিসেবে বলা যেতেই পারে যে, অল্পকাল আগে গ্রাম বাংলায় মাটির উনুনে রাক্ষসীর মতো করে জ্বলতে থাকা আগুনের মধ্যে জগভর্তি পানি একদম উপুর করে ঢেলে দিলে যেভাবে আগুন একটা ফ্যাত শব্দ করার মাধ্যমে একটু রাগান্বিত হয়ে বিদায় নেয়, আজকে তার মুখে সেই কবিতাংশটুকু শুনে ঠিক সেই আগুনের মতো করেই আমার মনের ভিতরের আনন্দ গুলো হঠাৎ করে বিদায় না জানিয়েই বিদায় নিলো। আমি তখনআর তেমন কিছু বললামনা। তার পরবর্তী কথা শুনার অপেক্ষায় রইলাম। কয়েক মিনিট কিংবা তারও কিছু কম সময় পর সে কিছু বলা শুরু করলো।
“যদিও সভ্যতার সাথে সাথে আমিও একদিন ধ্বংস হয়ে যাব এটা নিশ্চিৎ তবু সভ্যতা যতক্ষণ বাঁচে, যতদিন তার জীবিত থাকার ক্ষমতা থাকে,আমিও তার সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর হলো কই? চলে যাচ্ছি তার আগেই, যেতে হচ্ছে, যেতে হবে। হয়তো তোমাদের কারণে অথবা নিজের। “