ঘন্টাখানিক আগেও মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিলো। এশার নামাজ শেষে এক কাপ চা নিয়ে নোটবুকটা অন করলাম। এইতো ৬ মিনিট আগেও ১৮ তারিখ ছিলো কিন্তু এখন ১৯ জুলাই। মানে, রাত ১২ টা বেজে ০৬ মিনিট। চা হাতে বসেই লেখা শুরু করিনি, তার আগে কয়েকটা কল করে নিলাম বর্তমানে আমার সবথেকে প্রিয় কিংবা খুব বেশি কাছের কিছু মানুষদের। তারা হলেন পরম শ্রদ্ধেয়, প্রতিবাদী, বিচক্ষণ সাংবাদিক কাজী মিম আপু, আমার সবথেকে কাছের বন্ধু তুহিন আফ্রিদি এবং জামিয়া আজাদ অথৈ সহ আরও দুইজন। আমি সাধারণত ফোনে কথা বলার থেকে বেশিরভাগ সময়ই মেসেজ করি। কিন্তু আজ সেই সুযোগটা নেই। মোবাইল সিমে নেট নেই। Wifi এর speed নেই। বিকাশ থেকেও টাকা পাঠানো যাচ্ছেনা। এই সব কিছুতে নেই, যাচ্ছেনা কিংবা হচ্ছেনা বলাটা হয়তো ভুল হবে, এই সকল কিছু সরকারের নির্দেশনায় বন্ধ করে রাখা হয়েছে, যাতে বর্তমানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়া যায়। গত প্রায় ১৫ দিন যাবৎ চলছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। গুলি খেলেন, শহীদ হলেন আবু সাঈদ সহ আরও কতজন, ছাত্রী-লীগ নেতারা কত ভাইবোনদের পেটাল, হত্যা করলো, ধর্ষণ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি তারা। আন্দোলন দেশের প্রতিটা কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে, সকল শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ যোগাযোগের সকল মাধ্যম বন্ধ থাকায় ঢাকার খবর পেতে একটু অসুবিধা হচ্ছে, কিংবা ঢাকার বাইরের মানুষদের নতুন করে সংঘবদ্ধ হতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। মিম আপুর সাথে কথা বলে জানলাম আন্দোলনের দফা বৃদ্ধি পেয়ে ১ থেকে ৩ হয়েছে এবং আমার বন্ধু জামিয়া, যে ঢাকায়ই থাকে তাকে কল করে জানতে পারলাম দফা আরও বৃদ্ধি পেয়ে ৬ এ পৌঁছেছে। এ যেন স্বাধীন দেশে পরাধীন জাতির নতুন করে স্বাধীনতা চাওয়া, স্বাধীনতা স্বাধীনতা!
স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকদের পুলিশ গুলি করে কিভাবে? কারা এই ছাত্রলীগ যারা সাধারণ শিক্ষারর্থীদের দমিয়ে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে? ছাত্র হয়েও ছাত্রের বিরোধীতা কেন? সরকার শিক্ষারর্থীদের বিরুদ্ধে কেন?
সাধারণ জনগণ ভুগছে কেন? ৫৬% কোটা কেন? ভারত বাংলাদেশ রেল ট্রান্জিট কেন? মিডিয়া কিছু বলছেনা কেন? এসব ভাবতে ভাবতে পায়চারী করছিলাম, উত্তর মেলাতে পারছিনা, ক্রমশ সকল চিন্তা ঝাপসা হয়ে আসছে। পড়া টেবিলের পাশের নোটিশবোর্ডে ‘Patriotism Bangladesh’ লেখা স্টিকি পেপারটা ঝুলে আছে, হয়তো খসে পড়বে শীঘ্রই নতুবা নতুনকরে লাগানো হবে নতুন এক স্টিকি পেপার।