হুমায়ূন আহমেদের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি


হুমায়ূন আহমেদের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি

হুমায়ূন এক্কেরেই তার সৃষ্ট ভেলকিবাজ হিমু বা নির্লিপ্ত মিসির আলীর মত চরিত্র আছিলো না। সে ছিল দুনিয়াদারি বোঝা বৈষয়িক লোক। শুরু থেকেই ক্যারিয়ারসচেতন লোক।

১৯৭২। তার প্রথম বই নন্দিত নরকে প্রকাশ পাইলে লোকে খাচ্ছিলো না। প্রকাশক খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানির মালিক খান সাহেবের তরফে এটা তরুণ হুমায়ূনকে জানানো হয়। নন্দিত নরকের প্রচ্ছদ করছিলো তার ছোটভাই জাফর ইকবাল ও ভাস্কর শামীম সিকদার। হুমায়ূন পয়েন্ট আউট করলেন এটাই সমস্যা। লো কোয়ালিটির প্রচ্ছদের কারণে নন্দিত নরকের খাওয়া জুটতেছিল না।

হুমায়ুন, খান সাবকে এ প্রচ্ছদ পাল্টায়ে কাইয়ুম চৌধুরীকে দিয়ে করাতে বলে। পুচকে হুমায়ূনের এ আবদারে খান সাব অবাক বা বিরক্ত হোন বটে তবে হুমায়ূনের প্রেসক্রিপশনে সে চেষ্টাই নেন৷ দিন যাইতে লাগলো। হুমায়ূনও তাগাদা দিতে থাকলো। শেষ পর্যন্ত প্রচ্ছদ হাসিল হয়, কাইয়ুম চৌধুরী এঁকে দেন। কিন্তু বিনিময়ে খান সাবকে কুত্তার কামড় পর্যন্ত খাইতে হয় (আল্লার কসম)।

প্রমোশনাল কাজ কামে হুমায়ূনের ভালো রকমের কুড়কুড়ানি আছিলো। সে ও সময়ে সাহিত্য বিষয়ক যতো পুরস্কার আছিলো সবেতে লবিং চালাইতে থাকে। যেন এক সূঁচ, ফাঁক পাইলেই ঢুকে পড়তেছে এমন। বেলায় অবেলায় (পত্রিকা) অফিসে অফিসে ধর্না দিতেছিলো। জড়ো করতেছিলো সাংবাদিক ভাই বেরাদর ও সম্পাদক বন্ধু। যেনো ঘন ঘন তারে নিয়া তার বই নিয়া পজিটিভ নিউজ / রিভিউ করা হয়।

এগুলার ফাঁকে হুমায়ূন হস্তবিশারদের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হইছিলো। উদ্দেশ্য পত্রিকা অফিসে বেশি বেশি সময় কাটানো। হুদাই সে ঘণ্টা ঘণ্টা বসে থাকতো। অফিসে গতায়তে ব্যস্ত লোকদের হাত ধরে টানাটানিতে মন দিতো। লক্ষ্য প্রভাবশালীদের ইম্প্রেস করা। তার ভংচং থামতেছিলো না।

এর সবই সে করতেছিল পজিশনিং পলিসি হিসাবে। একদম যারে বলে হাতে কলমে ব্যবহারিক পলিসি। যারা ভাবেন মার্কেটিংয়ের দরকার নাই, তারা এখান থেকে শিখতে পারেন। হুমায়ূন কোনো অংশে ‘কোয়ালিটি’ কম বুঝতেন না। কিন্তু আশির দশকে এসব ছিল তার স্মার্ট মুভ। মহাপুরুষ পরে হতে পারবেন, কার্যকরী প্রচার-প্রসার চাইলে আগে হুমায়ূনকে ফলো করেন। রবীন্দ্রনাথকেও করতে পারেন। ওর মার্কেটিং স্ট্রাটেজি আরো খতরনাক। সে গল্প আরেক দিন করা যাবে। কাউকাব সাদী


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

আরও দেখুন। আপনার ভালো লাগতে পারে।