লোকে বলে প্রেমে পরলে যেকেউ নাকি কবি হয়ে যায়৷ আর প্রেমটা যদি হয় দুজন কবির মধ্যে তা হয় মধুর, ভাষাও হয় কবিতার। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দুই কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও তসলিমা নাসরিনই তার উদাহরণ। কাব্য-ভাষায় আরম্ভ হয়েছিল তাদের প্রেম৷ কিন্তু যখন বিচ্ছেদ হয়, তখন কবিতার মাধ্যমেই ঘটে তাদের বাকবিতন্ডা।
রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ এবং তসলিমা নাসরিন ২৯ জানুয়ারি ১৯৮১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন৷ রুদ্র তখন স্বনামধন্য কবি—তসলিমাও
নিয়মিত লেখা-ছাপা শুরু করেছিলেন।
৬ বছর দাম্পত্য সংসারের পর ১৯৮৬ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়, উভয়ের সম্মতিতে । এতে ব্যথার স্রোত বইতে থাকে দুজনের মনেই। আর কবি দুজন লেখেন পাল্টাপাল্টি কবিতা। দ্বন্দ্বের কবিতা৷
তসলিমা নারসিন রচনা করেন “দুধরাজ” (প্রায় ১৯৮৬)
কেউ শখ করে পাখি পোষে ।
কেউ- বা কুকুর ।
আর আমি এক- পা এগিয়ে গিয়ে ;
একজন কবিকে স্বগৃহে শখ করে পালন
করেছি ।
পাখা নেই,
তবু সে উড়াল দেবে
কেশরের কিচ্ছু নেই ;
তবু সে ঘাড়ের
রোঁয়া ফুলিয়ে দাঁড়াবে ।
খেতে দিই ,
বুকের বল্কলে ঢেকে বলি ;
ঘুম যাও ।
কবি কি ঘুমায়?
বিড়াল-নরম হাত থেকে বের হয়
তার ধারালো নখর ;
আঁচড়ে কামড়ে আমাকেই আহত করে !
বাদুড়ের মতো ঝুলে থাকে ;
আমারই পাঁজরায় ।
কবি কি ঘুমায়?
তারচে’ কুকুর পোষা ভাল !
ধূর্ত যে শেয়াল, সে-ও পোষ মানে !
দুধকলা দিয়ে আদরে-আহ্লাদে এক
কবিকে পুষেছি এতকাল ;
আমাকে ছোবল মেরে দ্যাখো সেই
কবি আজ কীভাবে পালায়।"
এর উত্তরে রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ১৪ জানুয়ারি ১৯৮৯ সনে লিখেন :
তুমি বরং কুকুর পোষো –
তুমি বরং কুকুর পোষো,
প্রভুভক্ত খুনসুটিতে কাটবে তোমার নিবিড় সময়,
তোর জন্য বিড়ালই ঠিক,
বরং তুমি বিড়ালই পোষো
খাঁটি জিনিস চিনতে তোমার ভুল হয়ে যায়
খুঁজে এবার পেয়েছ ঠিক দিক ঠিকানা
লক্ষ্মী সোনা, এখন তুমি বিড়াল এবং কুকুর পোষো
শুকরগুলো তোমার সাথে খাপ খেয়ে যায়,
কাদা ঘাটায় দক্ষতা বেশ সমান সমান।
ঘাটাঘাটির ঘনঘটায় তোমাকে খুব তৃপ্ত দেখি,
তুমি বরং ওই পুকুরেই নাইতে নামো
উংক পাবে, জলও পাবে।
চুল ভেজারও তেমন কোন আশঙ্কা নেই,
ইচ্ছেমত যেমন খুশি নাইতে পারো।
ঘোলা পানির আড়াল পেলে
কে আর পাবে তোমার দেখা।
মাছ শিকারেও নামতে পারো
তুমি বরং ঘোলা পানির মাছ শিকারে
দেখাও তোমার গভীর মেধা।
তুমি তোমার স্বভাব গাছে দাঁড়িয়ে পড়ো
নিরিবিলির স্বপ্ন নিয়ে আর কতকাল?
শুধু শুধুই মগজে এক মোহন ব্যধি
তুমি বরং কুকুর পোষো, বিড়াল পোষো,
কুকুর খুবই প্রভুভক্ত এবং বিড়াল আদরপ্রিয়়
তোমার জন্য এমন সামঞ্জস্য তুমি কোথায় পাবে?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
0 মন্তব্যসমূহ