সন্ধ্যার চাদরে পৃথিবী ঢেকে আছে। দখিনা হাওয়ায় নৃত্য করছে পাতা, লিকলিকে সব শাখা। জানালার গ্রীলে হাত ডুবিয়ে থুতনি ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছি দিগন্তে। বাতাসের শীতল পরশে আবিষ্ট মন-পরম আবেশে ঘোর জাগে। চোখ বুজে আসে। জানালার ওপাশে মধ্যবয়সী পাতা-পল্লবহীন পেয়ারা গাছ। তার চারপাশে দুলছে নাম না জানা বুনোগাছ, ভাসমান আবছায়া। কচি পাতাগুলো দূর থেকে আসা সন্ধ্যার নিয়ন আলোয় চিকচিক করছে, প্রথমে ভূতুড়ে ঠেকে-কিয়ৎক্ষণ একদৃষ্টে তাকালে স্পষ্ট ধরা যায়। চোখ সরাই, ভ্রূক্ষেপহীন হই। কোথায় যেনো নীড় তার-ভীষণ ব্যাকুল কণ্ঠে অনবরত কাকলি রব তুলছে টুনটুনি পাখিটি। কীসের ব্যাকুলতা জানতে ইচ্ছে হলো। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকি অনতিদূরের হাটে জ্বলতে থাকা সারি সারি আলোয়। বর্ষাকালে যখন থৈথৈ জল, বাতাসে মৃদু কাঁপন, আর কেঁপে ওঠে আলোগুলো। কী যে চমৎকার লাগে তখন!
ঘোরের ভেতর ভ্রম হয়। আমি দেখতে পাই আলোগুলো আকাশে উড়ছে এলোমেলো, মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা ঝাপটে। দ্রুত চোখ বন্ধ করি। এমন ভ্রম পূর্বেও হয়েছে বহুবার। ঘোরে হারিয়ে যাই। চোখ খুলি, তাকাই আকাশে, খুব পরিচিত কিছু তারা হাসছে কেবল, শুক্লপক্ষের চাঁদ এখনো জেগে ওঠেনি। আমি তাকিয়ে আছি একদৃষ্টে, তারার দিকে। আবার ভ্রম হয় তারাগুলো হেলেদুলে ওঠে। ফের চোখ বন্ধ করি, তাকাই। আচমকা বাতাসের ধুলোকণা চোখে এসে পড়ে। মনে পড়ে যায় তোমাকে। তুমি যে সংগুপ্ত এক তীব্র স্পন্দন। মনে পড়ে গেলো কল্পনার ভাঁজে ভাঁজে আলপিনে নোট করে রাখা হাজার সংলাপ -তোমার আর আমার। অঘোষিত এক প্রণয় প্রেমের গল্প। তোমার জন্য গড়া এসব অনুভূতি আমার একান্ত নিঃসঙ্গকলীন অখণ্ড সময়ে নরম পরশ বুলিয়ে যায়, যেতে থাকে।
ইতি,
রেজাউল করিম








মন্তব্য করুন