আমরা চার (সামিরা আলি)

114
0


আমাদের বাসার সামনের বাসায় একজন নতুন ভারাটিয়া এলো। আম্মুর সাথে আন্টির ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। আম্মু মাঝে মাঝেই তাদের বাসায় যেত।

একদিন আমিও আম্মুর সাথে তাদের বাসায় গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি আমার সমবয়সী আন্টির একটা ছেলে আছে। মূলত আম্মুর সূত্রে আমার তার সাথে পরিচয়।


ছেলেটির নাম আখিরুল ইল্লিন। আস্তে আস্তে সে আমার খেলার সাথী হয়ে উঠলো। আমরা দুজন দুই স্কুলে পড়তাম। আখিরুল আমার থেকে ভালো স্টুডেন্ট ছিল ।

 

প্রায় প্রতিদিনই আমি তার এর জন্য  আম্মুর কাছে বকা থেতাম। আখিরুল সকালে ঘুম থেকে উঠে জোরে জোরে চেচিয়ে চেচিয়ে পড়ত। আর সেটা শুনে আম্মু আমাকে বকাবকি শুরু করত।

এভাবে কেটে যায় আমাদের তিনটা বছর। হঠাৎ একদিন বাসা চেঞ্জ করে আখিরুলরা; অন্য জায়গায় চলে যায়। প্রায় দুই বছর ধরে আখিরুল এর সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। প্রায় ভুলেই গিয়েছি তার এর কথা।


৬ষ্ট শ্রেণিতে ভর্তি হলাম শহীদ ক্যাডেট একাডেমী তে। 

হঠাৎ একদিন আখিরুল সাথেই স্কুলে দেখা। কিন্তু তখন আমরা দুজন দুজনকে চিনতাম ঠিকই কিন্তু কথা হত কম। ৬ মাস ক্লাস করার পর আমি এসে ভর্তি হলাম সখিপুর পি.এম পাইলট গভঃ স্কুল এন্ড কলেজ -এ। যদিও আখিরুল এই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে শুরু থেকেই ভর্তি হয়েছিল কিন্তু এখানে ক্লাস না করে ক্যাডেট কোচিং করতো; শুধু সাময়িক পরিক্ষাগুলো দেওয়ার জন্য এখানে আসতো পরিক্ষার সময়গুলোতে। দুই বছর পর আখিরুলও আমাদের স্কুলে এসে ভর্তি হয়। আমারা তখন ৮ম শ্রেণিতে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়।

এক বছর পর আবার ৯ম শ্রেণিতে আমরা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। আখিরুল বিল্লাল স্যার এর কাছে গণিত প্রাইভেট পড়তো। ফাস্ট দিন গিয়ে দেখি আখিরুল!  কিন্তু ও  আমাকে দেখে চিন্তে পারেনি। না চিন্তে পারাটাই স্বাভাবিক প্রায় ৩বছর পর আবার দেখা। কারণ, আমরা ৮ম শ্রৈনিতে পাইলট স্কুলে একসাথে পড়লেও সেকশন আলাদা হওয়ার কারণে আমাদের দেখা হয়নি। ২দিন পর আমার নাম শুনে আখিরুল আমাকে চিন্তে পারে। আস্তে আস্তে শুরু হয় কথা বলা। 

আস্তে আস্তে আবার জেগে উঠে পুরোনো সেই বন্ধুত্ব।



এক দিন প্রাইভেটে একজন নতুন ছাত্র জয়েন করলো। সে আর কেউ নয়, আমার ছোটবেলার বন্ধু তুহিন। প্রায় চার বছর পর তার সাথে আমার দেখা। ওর সাথে পরিচয় টা মূলত আমার আম্মুর কারণেই।

পঞ্চম শ্রেণীতে আমি অন্য স্কুলে চলে যাওয়াতে তুহিনের সাথে আর কথা হয় নাই । তুহিনও ফাস্ট আমাকে প্রাইভেট এ দেখে চিনতে পারেনি। আস্তে আস্তে তুহিন আর আখিরুল ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। 


আমাদের তিনজনের সাথে যোগ হয় শফিউল নামে আরও একজন।  শফিউল ছেলেটি অনেক মিশুক। অল্পদিনের মধ্যে সে আমাদের ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে।

ঝগড়াঝাটি, মারামারি, চিল্লাচিল্লি এভাবেই চলছে আমাদের বন্ধুত্ব। প্রাইভেটে আগে ছুটি নিয়ে ঘুরাঘুরি করা, স্কুল পালিয়ে ঘুরতে যাওয়া এগুলো তো আছেই। দেরি করে প্রাইভেট এ যাওয়া, ফারুক স্যার এর কাছে বকা খাওয়া, এক জন দূষ করে সবার ওপরে দূষ চাপিয়ে দেওয়া, শুধু শুধু বক-বক করা এগুলার মজাই আলাদা।


আমরা যখন রাস্তা দিয়ে যাই আনেকেই আনেক কথা বলে। আমার এগুলা কেয়ার করি না। বেশিরভাগ মানুষই আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যদিও তাদের তাকিয়ে থাকার কারণটা আম্দের কাছে স্পষ্ট না। স্কুলে আনেকের সহ্য হয় না আমাদের বন্ধুত্ব। আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করার আনেক চেষ্টা করে অনেকে। কিন্তু পারে না আর পারবেও না। আমাদের বন্ধুত্ব এমন হয়ে ওঠেছে আমাকে একা দেখলে সবাই জিজ্ঞেস করে -কী রে ওরা কই?

আমার সব রাগ আভিমান যেন ওদের উপরেই। ওদের সাথে এমন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ওদের ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। তাদেরকেই তো আমার সব বিপদ-আপদে সব সময় পাশে পেয়েছি। এভাবেই যেন সুখে-দুঃখে পাশে পাই তদের। তুহিন আর আখিরুল আমার ১০বছর এর পুরনো বন্ধু হলেও সফিউলও অল্প দিনেই আমাদের খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেছে। তরা আমার এমন বন্ধু যাদের মন খোলে সব বলতে পারি। তরা শুধু আমার বন্ধু না আমার ভাই। তরা ছিলি, তারা আছিস, আর তরাই থাকবি।


সামিরা আলি


sahittorosh.com

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।